জাতিসঙ্ঘ (রাষ্ট্রসঙ্ঘ) বিশ্বের জাতিসমূহের একটি সংগঠন, যার লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আইন, নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক অগ্রগতি এবং মানবাধিকার বিষয়ে পারষ্পরিক সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করা। ১৯৪৫ সালে ৫১টি রাষ্ট্র জাতিসঙ্ঘ বা রাষ্ট্রসঙ্ঘ সনদ স্বাক্ষর করার মাধ্যমে জাতিসঙ্ঘ বা রাষ্ট্রসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং পরবর্তীতে লুপ্ত লীগ অফ নেশন্সের স্থলাভিষিক্ত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে বিজয়ী মিত্রশক্তি পরবর্তীকালে যাতে যুদ্ধ ও সংঘাত প্রতিরোধ করা যায়, এই উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী হয়। তখনকার বিশ্ব রাজনীতির পরিস্থিতি জাতিসংঘের বা রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাংগঠনিক কাঠামোতে এখনও প্রতিফলিত হচ্ছে। 

জাতিসঙ্ঘ বা রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের ৫টি স্থায়ী সদস্য (যাদের ভেটো প্রদানের ক্ষমতা আছে) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স , যুক্তরাজ্য , রাশিয়া , গণচীন, মেক্সিকো ও তিউনিসিয়া হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৭টি বিজয়ী দেশ। [ তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী জাতিসঙ্ঘ বা রাষ্ট্রসঙ্ঘের সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা ১৯৩ সদস্য। [১] এর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে অবস্থিত। সাংগঠনিকভাবে জাতিসঙ্ঘ বা রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রধান অঙ্গ সংস্থাগুলো হলো - সাধারণ পরিষদ , নিরাপত্তা পরিষদ , অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ , সচিবালয় , ট্রাস্টিশীপ কাউন্সিল এবং আন্তর্জাতিক আদালত । এছাড়াও রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ ইত্যাদি। জাতিসঙ্ঘ বা রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রধান নির্বাহী হলেন এর মহাসচিব। ২০০৭ সালের জানুয়ারি ১ তারিখ হতে মহাসচিব পদে রয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক বান কি মুন ।

কার্যাবলীঃ

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বিতর্ক সভা হিসেবে বিশ্ব মতামত প্রকাশ করতে পারে। জাতিসংঘ সনদের ১০নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে - সাধারণ পরিষদ জাতিসংঘের সনদের অন্তর্ভূক্ত যে-কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারে। পরবর্তীতে বিভিন্ন শাখায় সুপারিশ প্রেরণ করতে পারে।
বিশ্বশান্তি এবং নিরাপত্তা রক্ষা করাও সাধারণ পরিষদের কাজ। তাই যে-কোন রাষ্ট্র বা সদস্য রাষ্ট্র কর্তৃক শান্তি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে-কোন বিষয় সাধারণ পরিষদে প্রেরণ করা যায়। প্রেরিত বিষয়(গুলো) পরিষদ কর্তৃক পর্যালোচনা করার পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রেরণ করা হয়।
আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়ন করতে পারে সাধারণ পরিষদ। এমনকি বিভিন্ন রাষ্ট্রের আচার-আচরণ অনুসন্ধান ও পর্যালোচনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইনের প্রসার ঘটাতে পারে।
এ পরিষদ বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করে। তাই যে কোন রাষ্ট্র বা সদস্য রাষ্ট্র কর্তৃক শান্তি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে-কোন বিষয় সাধারণ পরিষদে প্রেরণ করা যায়। উক্ত বিষয়ে সাধারণ পরিষদে পর্যালোচনা করার পর নিরাপত্তা পরিষদে প্রেরণ করে।
জাতিসংঘের অন্যান্য শাখার কার্য্যের অনুসন্ধান ও নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যান্য শাখাগুলো সাধারণ পরিষদের নিকট বার্ষিক প্রতিবেদন প্রদান করে। সাধারণ পরিষদ উক্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে।
নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশক্রমে যে-কোন রাষ্ট্রকে নতুন সদস্যরূপে গ্রহণ করতে পারে। পাশাপাশি পুরাতন যে-কোন সদস্য রাষ্ট্রকে সাময়িক কিংবা স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে পারে।
পরিষদটি কিছু কিছু অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করে। জাতিসংঘের বাজেট পাস করা এর অন্যতম কাজ। এছাড়াও, সংস্থার বাজেট পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ অনুমোদন করে। পাশাপাশি সদস্যভূক্ত রাষ্ট্রসমূহের বার্ষিক চাঁদার পরিমাণ স্থির করে।
নির্বাচন সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড সম্পাদন করাও প্রধান কার্যসমূহের একটি। জাতিসংঘের মহাসচিব, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জন্য ১০জন অস্থায়ী সদস্য, আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সদস্য এবং অছি পরিষদের কতিপয় সদস্য নির্বাচন করা এর অন্যতম দায়িত্ব।
বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার লক্ষ্যে সাধারণ পরিষদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। পারস্পরিক সম্প্রীতি ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক যাতে ছিন্ন হলে সংস্থাটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে মীমাংসার চেষ্টা করে।

0 comments:

Post a Comment

sfd

sfd

আমাদের কথা

বেশি পড়া হয়েছে

যুক্ত হউন

সাম্প্রতিক

আপনি একজন ............

জানতে চাই আপনার কথা

Name

Email *

Message *