- 10:27 PM
- Moin Uddin
- No comments
হিংসা-প্রতিহিংসার নোংরা রাজনীতির খেলা সর্বত্র বিরাজমান। যে খেলার শুরুটা নিরুত্তাপ হলেও শেষ পরিণতি খুবই ভয়াবহ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি। এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাট ইস্যুটি অন্যায়, জুলুম, সংবাদের ভিড়ে ভাটা পড়ে গেছে।
আমরা সবাই কম-বেশি বহু ধারার শিক্ষাব্যবস্থার কুফল ভোগ করছি। বিতর্ক এড়িয়ে জনহিতকর ও বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলন করতে না পারার ব্যর্থতা আমরা দূর করতে পারিনি। এর মধ্যে আবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ওপর ভ্যাট আরোপ করা মানে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমাদের সব শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ পাচ্ছে না। এবারের ফলবিপর্যয় হওয়ার পরও দেখা গেছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরিমাণ আসন রয়েছে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি পাস করেছে। সব শিক্ষার্থী তো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাবে না। যারা সুযোগ পাবে না তারা কী করবে? পড়ালেখা ছেড়ে দেবে নাকি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করবে? রাষ্ট্র যদি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে লাখো-কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে পারে তাহলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাট কেন প্রত্যাহার করতে পারবে না। এ রকম প্রশ্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। আমরা আশা করি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের এ ব্যাপারে বোধোদয় হবে।
বিশ্ববিখ্যাত ফরাসি নাট্যকার ও হাস্যরসিক মলিয়ার (১৬২২-১৬৭৩) একবার সেরবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপককে গল্প শোনাচ্ছিলেন। গল্পটা এ রকম : “এক গণ্ডমূর্খ ধনী জমিদার প্যারিস থেকে অল্প দিনের জন্য গ্রামের বাড়িতে এসেছেন। নিজের প্রিয় ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়ে তিনি গ্রামে বেড়াতে বের হয়েছেন। রাস্তার ধারে এক নতুন বাড়ি দেখে তিনি থমকে দাঁড়ালেন। সেখানে অনেক ছেলেমেয়ের ভিড় দেখে তার কৌতূহল হলো। একটি ছেলেকে ডেকে তিনি রাজকীয় গাম্ভীর্যভাবে জিজ্ঞেস করলেনÑ ‘এখানে কী হচ্ছে’? ছেলেটি বলল, এটা বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে হাজার ফ্রাঁ (ফরাসি মুদ্রা) জমা দিলে পিএইচডি পাওয়া যায়। যারা হাতে বা পায়ের বুড়ো আঙুলে টিপছাপ দিতে পারে তারা এক হাজার ফ্রাঁ জমা দিলেই ডিগ্রি পেয়ে যায়। জমিদার তো বেজায় খুশি হয়ে ভেতরে গেলেন। কড়কড়ে নতুন এক হাজার ফ্রাঁ জমা দিয়ে ভিসির কাছ থেকে টিপছাপ দিয়ে ডিগ্রি নিয়ে এলেন। বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ তার মনে হলোÑ হায়! আমি কী বোকা, আমার ঘোড়ার জন্যও তো একটি ডিগ্রি আনতে পারতাম। যেই ভাবা সেই কাজ, ফিরে গিয়ে ভিসিকে বললেন, এই নিন আরো এক হাজার ফ্রাঁ আমার ঘোড়া আশা করি অন্তত পায়ে টিপছাপ দিতে পারবে, সুতরাং তাকেও একটি ডিগ্রি দিন। কিছুক্ষণ জমিদারের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে অবশেষে ভিসি বললেন, স্যরি আমরা শুধু গাধাদেরই ডক্টরেট দিয়ে থাকি, ঘোড়াদের দিই না।”
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সুনামের চেয়ে দুর্নামের পাল্লা একটু হলেও বেশি। তাই বলে সব বিশ্ববিদ্যালয় যে শুধু ডিগ্রি বিক্রি করছে তা কিন্তু নয়। অস্বীকার করার উপায় নেই, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশির ভাগই অযৌক্তিক মাত্রায় টিউশন ফিসহ নানা কায়দায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উচ্চহারে অর্থ আদায় করে থাকে। তবে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে একই পাল্লায় পরিমাপ করা সঠিক হবে না। সংখ্যায় একেবারে নগণ্য হলেও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় সত্যিকার অর্থেই শিক্ষার মান ধরে রাখার চেষ্টায় নিয়োজিত রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট বিক্রির। কিন্তু সবাই তো সার্টিফিকেট বিক্রি করছে না। আমার মনে হয় ঢালাওভাবে সব কিছু একপেশে করে গুলে ফেলার যৌক্তিকতা নেই। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য লেনদেনকৃত অর্থের ওপর ভ্যাট আরোপ করা হলে হাজারো শিক্ষার্থীকে তার মাশুল গুনতে হবে। বাংলাদেশ এখনো শিক্ষার কাক্সিত মানে পৌঁছতে পারেনি। যেখানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ানো দরকার, সেখানে ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা উচ্চশিক্ষার অন্তরালে একটি বড় বাধা। উচ্চবিত্ত পরিবারের পক্ষে এই ভ্যাট প্রদানে সমস্যা না হলেও নিতান্ত গরিব পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন হয়ে পড়বে অনিশ্চিত।
নিকট অতীতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আরোপিত ভ্যাট কিছুতেই কমানো হবে না। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, তারা ৫০ হাজার ৩০ হাজার টাকা বেতন দিতে পারে। আর মাত্র সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট কেন দেবে না? এটা হতে পারে না। তাদের আন্দোলনে আমার কোনো সমর্থন নেই। চলতি বছর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ওপর আরোপিত ৭.৫% ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সংবিধানের ১৫ নং অনুচ্ছেদে শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার বলা হলেও এবার বাজেটে এ খাতে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে, যা সংবিধান পরিপন্থী। যেখানে শিক্ষার দ্বিগুণ বাজেট বরাদ্দ দেয়ার কথা, সেখানে এ বছর বাজেটে শিক্ষা খাতে মোট জিডিপির ২ দশমিক ১৮ ভাগ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য ভ্যাটমুক্ত শিক্ষার বিষয়টি ভেবে দেখার এখনই সময়।
tofazzul1982@gmail.com - See more at: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/49395#sthash.nV8N8S0e.dpuf
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment