10:16 PM
Moin Uddin
No comments
এবিসি রেডিওর স্টুডিওতে প্রথম আলো জবস ‘হতে চাই পেতে চাই’ অনুষ্ঠানে গত ২৬ এপ্রিল এসেছিলেন হোমবাউন্ড প্যাকারস ও শিপারস লিমিটেডের কর ও আইনবিষয়ক ব্যবস্থাপক মো. আরশেদ আলী। কথা বলেছেন কথাবন্ধু লিনার সঙ্গে। ইনকাম ট্যাক্স অর্থাৎ আয়কর ও ভ্যাট অর্থাৎ মূল্য সংযোজন করের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি আলোচনা করেছেন।
কথাবন্ধু: ট্যাক্স ও ভ্যাট এই দুটির মধ্যে তফাত কী?
মো. আরশেদ আলী: ইনকাম ট্যাক্স অর্থ আয়কর এবং ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স সংক্ষেপে ভ্যাট অর্থাৎ মূল্য সংযোজন কর (মূসক)। একটি প্রতিষ্ঠান, একজন চাকরিজীবী অথবা একজন ব্যবসায়ীর নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে যে আয় হয়, তার ওপর সরকারকে নির্দিষ্ট কর দিতে হয়। তবে ট্যাক্স ও ভ্যাট দুটি শব্দের তফাত রয়েছে। নির্দিষ্ট আয়ের ওপর যে কর দেওয়া হয়, তাকে বলে আয়কর। আর ভ্যালু অ্যাডিশন অর্থাৎ একটি পণ্যের জন্য যে মূল্য সংযোজন করা হয়, এর ওপর যে করটা দিতে হবে, তাকেই ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স বা সংক্ষেপে ভ্যাট বলা হয়।
কথাবন্ধু: বাংলাদেশে কোন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে?
মো. আরশেদ আলী: সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। বিকম পাস কোর্সে, বিকম অনার্স, বিবিএ, অ্যাকাউন্টিং বিভাগে পড়াশোনা করলে আয়কর বিষয়টি এরই মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে। যাঁরা বিবিএ ও আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন, তাঁরাও আয়কর বিষয়টি পড়ছেন। কিন্তু ভ্যাট বিষয়টি আমাদের দেশের শিক্ষাক্রমে খুব একটা দেখা যায় না।
কথাবন্ধু: বাংলাদেশে কর বিষয়টির গুরুত্ব এবং চাকরির ক্ষেত্রগুলো কী কী?
মো. আরশেদ আলী: বাংলাদেশে এ বিষয়টির ব্যাপকতা অনেক। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আয়কর ও মূল্য সংযোজন করের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই প্রতিটি প্রতিষ্ঠান, ছাত্র বা নাগরিক যে-ই হোন না কেন, সবাইকে আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর সম্পর্কে জানা উচিত। বর্তমানে অনেকে আয়কর দিতে আগ্রহী কিন্তু তাঁরা জানেন না আয়কর কোথায় ও কীভাবে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রটিতে চাকরির সুযোগ অনেক। এ ক্ষেত্রে মানবসম্পদ বিভাগে যোগ্যতাসম্পন্ন লোকের দরকার রয়েছে। তাই ট্যাক্স ও ভ্যাটের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে চাকরির সুযোগ অনেক বেশি।
কথাবন্ধু: পড়াশোনা শেষে চাকরির শুরুতেই এই বিভাগে কী ধরনের কাজের সুযোগ রয়েছে?
মো. আরশেদ আলী: আপনি যদি দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন হন, তাহলে চাকরির শুরুতেই আপনি প্রাথমিক পর্যায়ে নয়, নির্বাহী পদেও কাজ করতে পারেন। এ জন্য আপনাকে আইন সম্পর্কে জানতে হবে। কীভাবে আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর জমা দেবেন। সবকিছুই আপনাকে জানতে হবে। চাকরির ক্ষেত্রটি অনেক বড়।
কথাবন্ধু: বাইরের দেশের সঙ্গে আমাদের দেশের এ বিষয়ে কোনো তফাত রয়েছে কি না?
মো. আরশেদ আলী: আইনের ক্ষেত্রে এর কোনো পার্থক্য নেই। বিষয়বস্তু ও বৈশিষ্ট্যগুলো একই। কিন্তু আমাদের দেশে ভ্যাটের পরিমাণ, কীভাবে জমা দেবেন, কত টাকা জমা দেবেন—এসব ব্যাপারে পার্থক্য রয়েছে। বাকি সবকিছু প্রায় এক রকম।
কথাবন্ধু: বাংলাদেশে কোনো ব্যবসা করতে গেলে আয়কর ও ভ্যাটের বিষয়কে কতটুকু প্রাধান্য দেওয়া উচিত?
মো. আরশেদ আলী: এখানে শুধু চাকরি পর্যায়ে নয়, প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন রকম করের পরিমাণ নির্ধারণ করা আছে। কোথায় কী ধরনের কাগজপত্র দরকার, কোথায় জমা দেবেন, কীভাবে জমা দেবেন—এগুলো জানতে হবে। রেজিস্ট্রেশন ও মূসক চালান সম্পর্কে জানতে হবে। তাই প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ ব্যাপারে দক্ষ ও যোগ্য কর্মী নেওয়া উচিত।
কথাবন্ধু: পেশা হিসেবে কেউ এই বিষয়ে কাজ করতে চাইলে তাঁর ক্ষেত্রে করণীয় কী?
মো. আরশেদ আলী: আয়কর ও ভ্যাট আইন যদি কেউ অনেক ভালো জানেন, তাহলে তিনি এ পেশায় অবশ্যই আসতে পারেন। এ জন্য অভিজ্ঞতার প্রয়োজন রয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দেওয়া সনদ থাকলে তা অবশ্যই সম্ভব। এনবিআরে পরীক্ষা দিতে পারেন। যদি পাস করেন তাহলে এনবিআর আপনাকে আইটিপি হিসেবে একটি সনদ দিয়ে থাকে। তখন তাঁরা আয়কর নিয়ে প্র্যাকটিস করতে পারেন। এ ছাড়া ভ্যাট আইনেও এনবিআর বিজ্ঞপ্তি দেয়। যদি কেউ পাস করেন, তাহলে তাঁকে ভ্যাট কনসালট্যান্ট হিসেবে এনবিআর লাইসেন্স দেয়। তাই কেউ যদি চাকরি না করে একে পেশা হিসেবে নিতে চান, তাহলে এর ক্ষেত্রটি অনেক বড় পরিসরে রয়েছে। আয়কর ও মূল সংযোজন কর সম্পর্কে সবারই পর্যাপ্ত পরিমাণ ধারণা থাকা উচিত।
কথাবন্ধু: কোনো প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রয়োজন আছে কি?
মো. আরশেদ আলী: শুধু সাধারণ পড়াশোনা নয়, এ জন্য অবশ্যই প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। এর কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য প্রথম আলো জবস এবং আরও কিছু প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ের ওপর কিছু প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে। তাই এ বিষয় নিয়ে কাজ করতে হলে অবশ্যই এ প্রশিক্ষণগুলো নেওয়া উচিত। আর অনেক বেশি পড়তে হবে। যত শিক্ষা তত জ্ঞান।
কথাবন্ধু: বর্তমান প্রজন্মকে এই বিষয়ে আরও উদ্বুদ্ধ করতে আপনার দিকনির্দেশনা কী হবে?
মো. আরশেদ আলী: বর্তমান প্রজন্মকে বলব, সততার সঙ্গে কাজ করুন। নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করুন। বেশি বেশি বই পড়ুন। পড়ার কোনো বিকল্প নেই। যত বেশি পড়াশোনা করবেন তত বেশি জ্ঞানার্জন করবেন। যাঁর কাছে জ্ঞান অস্ত্র যত বেশি থাকবে, সাফল্য তত দ্রুত তাঁর কাছে এসে পৌঁছাবে।
গ্রন্থনা: সুদীপ দে
Related Posts:
উপজাতি ! নাকি আদিবাসী ? সমার্থক ও সম্বোধনসূচক শব্দ বা নাম ব্যবহার বিষয়ক সাধারণ আলোচনা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বহুসংখ্যক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করে আসছে। বাঙালিদের সাথে একই ভৌগলিক সীমারেখার মধ্যে বসবাস করলেও এই সব জনগোষ্ঠীর প্রত্যেকেরই রয়েছে আলাদা আলাদা ভাষা, ঐতি… Read More
বিতর্কের নানা রূপ বিতর্ক হল বিশেষভাবে তর্ক। অতি সাধারণ কথায় একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে দলীয় অবস্থান থেকে তত্ত্ব উদাহরণ ও তথ্য দিয়ে যুক্তিপূর্ণভাবে নিজের বক্তব্য উপস্থাপনাই হল বিতর্ক। বিতর্ককে বলা হয় উদ্বুদ্ধকরণ শিল্প। প্রাচীনকালে গ্রীসের এই … Read More
আয়কর ও মূসক সম্পর্কেধারণা এবিসি রেডিওর স্টুডিওতে প্রথম আলো জবস ‘হতে চাই পেতে চাই’ অনুষ্ঠানে গত ২৬ এপ্রিল এসেছিলেন হোমবাউন্ড প্যাকারস ও শিপারস লিমিটেডের কর ও আইনবিষয়ক ব্যবস্থাপক মো. আরশেদ আলী। কথা বলেছেন কথাবন্ধু লিনার সঙ্গে। ইনকাম ট্যাক্স অর্থাৎ আয়… Read More
ভ্যাটমুক্ত শিক্ষা কেন নয়? হিংসা-প্রতিহিংসার নোংরা রাজনীতির খেলা সর্বত্র বিরাজমান। যে খেলার শুরুটা নিরুত্তাপ হলেও শেষ পরিণতি খুবই ভয়াবহ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি। এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাট ইস্যুটি অন্যায়, জুলুম, সংবাদের ভ… Read More
সংসদীয় বিতর্কের নিয়মাবলী পটভূমিঃ বিতর্ক অঙ্গনে ৯১ এর সংবিধান সংশোধনীর আগে থেকেই বিভিন্নভাবে সংসদীয় বিতর্কের চর্চা প্রচলিত থাকলেও অনেকটা জাতীয় রাজনীতির উপচে পড়া প্রভাবে মূলধারার বিতর্ক মডেল পরিণত হয় ’৯২-৯৩ বা সমসাময়িক সময়ে। অল্প সময়ের মধ্যে সং… Read More
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment