- 11:11 PM
- Moin Uddin
- No comments
গণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থার মধ্যে সংসদীয় গণতন্ত্র বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া, এর বিকাশ ও চর্চাকে দেশ ও জনগণের কল্যাণের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে যাওয়া জাতীয় কর্তব্য হিসেবেই বিবেচিত। আর এ কর্তব্য পালন করার মহান দায়িত্ব মাননীয় সংসদ সদস্যদের। যারা নিয়মিত সংসদে উপস্থিত থেকে, সংসদকে কার্যকর ও প্রাণবন্ত করবেন।
নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর গণতন্ত্রের ধারায় যখন দেশ ফিরে আসতে শুরু করল, তখন দেশের প্রধান দুটি দলের সম্মতিতেই আবার সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারায় ফিরে এলো দেশ। বিএনপি সরকার গঠনের (১৯৯১-৯৬) প্রথম আড়াই বছর জাতীয় সংসদ ছিল প্রাণবন্ত। তারপরই সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি শুরু হলো_ বর্তমানে যা স্থায়ী রূপ নিয়েছে। যখন যে দল বিরোধী দলে থাকে, সে দলই সংসদ বর্জন শুরু করে। সংসদে কথা বলার চেয়ে রাজপথে আন্দোলন করতেই তারা বেশি আগ্রহী। এর ফলে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নেমে আসে অত্যাচার-নিপীড়নের খড়গ। সরকারের অসহনশীল মনোভাব এবং অসহযোগিতামূলক আচরণের কারণেই বিরোধী দল সংসদে না গিয়ে রাজপথে থাকে। অথচ বিরোধী দলকে সংসদে ফিরিয়ে নেয়ার দায়িত্ব সরকারের ওপরই বর্তায়। কথায় আছে, যে যায় লংকার, সে-ই হয় রাবণ। সরকারে থাকলে এক ধরনের আচরণ আবার বিরোধী দলে থাকলে আরেক ধরনের। এই যে আচরণগত পার্থক্য, এটা সংসদীয় গণতন্ত্র বিকাশের ক্ষেত্রে বড় ধরনের অন্তরায়। - সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দলকে বলা হয় ছায়া-সরকার। দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে ছায়া-সরকারের ভূমিকা কোনো অংশেই সরকারের চেয়ে কম নয়। ছায়া-সরকার সরকারকে সহযোগিতা করবে ও পরামর্শ দেবে। জাতীয় দুর্যোগ ও সঙ্কটে সরকারের সঙ্গে তারাও দেশবাসীর পাশে এসে দাঁড়াবে। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতা ভিন্ন। এখানে এক নেত্রীর সঙ্গে অন্য নেত্রীর কথা হয় না, এমনকি মুখ দেখাদেখিও বন্ধ। এমন অবস্থায় বিরোধী দল কীভাবে সংসদে আসবে? পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, আস্থা তৈরি হলে নিজেদের ভেতরে দেশপ্রেম জাগ্রত থাকলে সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি চালু হতো না। আসলে আমরা নিজেরাই নিজেদের দেওলিয়াপনার এমন নজির স্থাপন করেছি, যা সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত। ওয়াল্টার বেজইট বলেছেন, 'জাতীয় সংসদ আদর্শ লোকদের এক বিরাট সমাবেশ ছাড়া আর কিছুই নয়।' উন্নত দেশের সংসদ সদস্যদের নীতি-নৈতিকতা, শিক্ষা-দীক্ষা, কর্তব্যবোধ, দেশপ্রেম ইত্যাদি মূল্যায়ন করলে ওই কথার যথার্থতা পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি অগ্রহণযোগ্য ও হাস্যকর। আমাদের মহান জাতীয় সংসদে যারা নির্বাচিত হয়ে আসেন, তাদের যোগ্যতা, নীতি-আদর্শ কী, শিক্ষা-দীক্ষা পরিস্থিতি কেমন, তাদের স্বদেশপ্রেম এবং জনস্বার্থকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা কোন পর্যায়ে_ এসব মূল্যায়ন করলে আমাদের জাতীয় সংসদ আদর্শ লোকদের এক বিরাট সমাবেশ কিনা তা সহজেই উপলব্ধি করা যাবে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্য ও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্যরা এসবের কিছুই তোয়াক্কা করেন না।
তারা সবসময় জাতীয় সংসদকে দেখে আসছেন হেঁয়ালির চোখে। বিরোধী দলের সদস্যরা সংসদে উপস্থিত তো থাকেনই না, উপস্থিত থাকেন না সরকারি দলের সদস্যরাও। দলীয়ভাবে তাদের মধ্যে নীতিগত পার্থক্য থাকলেও ব্যক্তিস্বার্থ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতা একই। গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র হচ্ছে, আত্মবিশ্লেষণ করা এবং আত্মমর্যাদাবোধ নিজের মধ্যে জাগিয়ে তোলা। আমাদের নেতা-নেত্রী, সংসদ সদস্যদের দিকে তাকালে কি এ সত্য প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত হয়। যদি তা-ই হতো, তাহলে জাতীয় সংসদ প্রাণবন্ত ও কার্যকর হতো। সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি বন্ধ হতো। মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্রের প্রতিষেধক কিন্তু স্বৈরতন্ত্র বা স্বেচ্ছাচারিতা নয়, আরো উৎকৃষ্টতর গণতন্ত্র। ভারতের দিকে যদি আমরা তাকাই, সেখানে বহু মত, বহু দল-গোত্রের বর্ণের দেশ, বহু ভাষার দেশ। দেশ হিসেবে যেমন বড়, জনসংখ্যাও অনেক। রাজনীতিবিদদের মধ্যে ব্যাপক মতপার্থক্য ও বৈরিতা থাকা সত্ত্বেও সে দেশে গণতন্ত্র টিকে আছে এবং সংসদ কার্যকর রয়েছে। জাতীয় সমস্যা সমাধানে সেখানে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয়। সরকারি ও বিরোধী দল তাতে সমান ভূমিকা রাখে এবং সঙ্কট মোচনে এগিয়ে আসে। আর আমাদের দেশে সরকারি দল যদি উত্তরে হাঁটে, বিরোধী দল হাঁটে দক্ষিণে। কোনো জাতীয় সঙ্কটে সরকারি দল 'হ্যাঁ' বললে বিরোধী দল বলবে 'না'। এ উত্তর-দক্ষিণ, হ্যাঁ-না'র মধ্যেই আমরা ঘুরপাক খাচ্ছি।
ঘুরপাক খাচ্ছে সংসদীয় গণতন্ত্রও। দেশ ও জনগণের ভবিষ্যতও এরই মধ্যে আবর্তিত। আব্রাহাম লিঙ্কন বহু আগে বলেছিলেন_ গণতন্ত্র এমনই এক ধরনের সরকার, যা জনগণের এবং জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্যই তৈরি। এ অসাধারণ অথচ সহজ কথাটা অনুসরণ করলেই কিন্তু সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর একটি বড় সমস্যা হচ্ছে_ তারা কোনোভাবেই সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। সবসময় সত্য ও বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে চলতে পছন্দ করে। উপেক্ষা করে জনগণকে। এমতাবস্থায় কীভাবে জাতীয় সংসদ কার্যকর হবে, আর কীভাবেই বা দেশের উন্নয়ন ঘটবে। উদার গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি যদি দেশে গড়ে না ওঠে, তা হলে কোনোভাবেই জাতীয় সংসদ কার্যকর হবে না। বিগত দুই দশকের বেশিরভাগ সময় যে সংসদ অকার্যকর থেকেছে, তার প্রধান কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্কীর্ণমনস্কতা ও অসহিষ্ণুতা। তাদের এ ধরনের মানসিকতার পরিবর্তন যতদিন না ঘটবে ততদিন দেশ ও জনগণের জিম্মিদশা কাটবে না। গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র হচ্ছে উদারনৈতিক ও সহনশীল দৃষ্টিভঙ্গি জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া। আর এটা ছড়িয়ে দেবে রাজনৈতিক নেতৃত্বই। আমাদের দেশের দিকে অথবা জাতীয় সংসদের দিকে তাকালে সে সত্য কি প্রতিষ্ঠিত হয়। যদি না হয় তবে সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি চলতেই থাকবে। যা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো ধারাবাহিকভাবে করে আসছে। আমরা এ সংস্কৃতির অবসান চাই। দেশ ও জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই। চার দশকে বাংলাদেশ দাঁড়াতে পারলো না কেন, তার আপন গৌরব, ঔজ্জ্বল্য ও কর্মসুষমা নিয়ে তা এক বিরাট প্রশ্ন।
বাংলাদেশের মানুষ ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ একটা বিস্ময়কর, পৃথিবীখ্যাত ঘটনা। মাত্র নয় মাসে লড়াকু বাঙালি জাতি পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মরণপণ যুদ্ধ করে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে ইজ্জত দিয়ে, অনেকে চিরতরে পঙ্গু হয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। এতো ত্যাগ ও রক্ত দিয়ে পাওয়া স্বাধীন দেশ কেন তিন যুগেও দাঁড়াতে পারেনি- তা রীতিমতো গবেষণার বিষয়। দুর্বল রাষ্ট্রকাঠামোর ওপর দুর্বল গণতন্ত্র দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে তার ভার জনগণের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয় এ সহজ কথাটি আমাদের দেশ পরিচালনাকারীরা কখনোই বুঝতে চেষ্টা করেন না। একটি অপার সম্ভাবনার দেশ কেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে, দেশটির কেন এমন হতদ্দশা_ এ প্রশ্ন যে কেউ করতে পারেন। পাশাপাশি এ আক্ষেপও করতে পারেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে দেশটির এমন অবস্থা হতো না। আমরা ভাষার মাস পালন করি কিন্তু কার্যক্ষেত্রে বা প্রায়োগিক দিক থেকে বাংলা ভাষাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। আমরা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে গর্বিত দৃষ্টিতে দেখি ও মূল্যায়ন করি অথচ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত স্বনির্ভর বাংলাদেশ আজো গড়তে পারিনি। স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনো শেষ করতে পারিনি। মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার বিপন্ন ও মানবেতর জীবনযাপন করে। বেঁচে থাকার জন্য অন্যের গলগ্রহ হতে হয়। আমরা মানবাধিকার সংরক্ষণের কথা বলি অথচ প্রতি পদে পদে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। আমরা নারী স্বাধীনতার কথা বলি, কিন্তু ঘরে-বাইরে যেভাবে, যে মাত্রায় নারীরা নির্যাতন, শোষণ, লাঞ্ছনার শিকার, ধর্ষণ-গণধর্ষণের শিকার তা আমাদের অন্তঃসারশূন্য সমাজেরই এক ভয়াবহ চিত্র। নারীর স্বাধীন ইচ্ছা ও স্বপ্নকে আমরা প্রতি মুহূর্তে গলাটিপে হত্যা করি।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশে এখন সংঘাতময় রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল চলছে। এ ক্রান্তিকাল বাংলাদেশের জন্য এই প্রথম তা নয়। স্বাধীন জাতি রাষ্ট্র হিসেবে জন্মলাভের পর থেকেই ক্রান্তিকাল চলছে। এ ক্রান্তিকাল দূর করে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুস্থতা কীভাবে রাষ্ট্রের মধ্যে আনা যায় সে ব্যাপারে দেশের রাজনৈতিক দলসমূহ, সরকার কিংবা রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারকদের কোনো উল্লেখযোগ্য তৎপরতা বা উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। এই না পড়ার কারণ বহুবিধ হলেও প্রধানত কারণ হচ্ছে দেশপ্রেমহীনতা ও ক্ষমতার সীমাহীন লোভ। এ লোভ সংবরণ করা দেশের রাজনৈতিক দল কিংবা রাজনৈতিক নেতৃত্বের পক্ষে সম্ভব নয়। সম্ভব যে নয় তা আমরা দেখে আসছি চার দশক ধরে। যার কারণে দেশে গণতন্ত্রের বিকাশ ও প্রতিষ্ঠা বাধাগ্রস্ত হয়। ১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল। তখন এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে, হিন্দু-মুসলমান আলাদাভাবে দুই দেশে বাস করলে উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। ভাইয়ে ভাইয়ে দাঙ্গা বা সংঘাত রক্তপাত হবে না। পাকিস্তান ভাগ হয়ে যাওয়ার পর বাঙালি মুসলমানরা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করল। কিন্তু বছর পেরোতে না পেরোতেই তারা হোঁচট খেল। পূর্ববঙ্গের মানুষ যখন দেখল যে, তাদের শ্রমে-ঘামে উৎপাদিত পণ্য পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং পরবর্তীকালে আবার উচ্চমূল্যে তাদের কাছেই বিক্রি করছে। কী সাংঘাতিক ঘটনা। এরপর থেকেই পূর্ববঙ্গের মানুষের স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়া শুরু হলো। তারা স্বাধিকার অর্জনের জন্য লড়াই শুরু করলেন। একটি স্বাধীন সার্বভৌম ভূখ-, একটি পতাকা ও স্বাধিকার অর্জনের জন্য আমরা বাঙালিরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মরণপণ করে রক্তক্ষয়ী অসম যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলাম।
আমাদের উদ্দেশ্য ছিল একটাই_ জয়ী আমাদের হতেই হবে। এটা ছিল আমাদের জাতীয় অস্তিত্বরক্ষার সংগ্রাম। নয় মাস যুদ্ধের পর ভারতের সহযোগিতায় আমরা জয়ী হয়েছি। জয়ের যে কী আনন্দ, যারা মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশ নিয়েছেন, যারা ত্যাগী ও ভুক্তভোগী তারাই সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। এ যেন দীর্ঘদিন খাঁচায় বন্দি পাখিকে মুক্ত আকাশে উড়িয়ে দেয়া। এ আনন্দ স্বাধীনতার, এ আনন্দ বিজয়ের। এ দেশের মানুষ পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ করে মাতৃভাষার দাবিতে। '৫২-র ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত পথ বেয়েই আসে স্বাধীনতা, আসে বিজয়। একবার পশ্চিম পাকিস্তানিদের করতলগত হয়ে তাদের শোষণ নির্যাতন অত্যাচার নিপীড়নের নিষ্ঠুর শিকার হয়ে বাঙালির স্বপ্ন ভঙ্গ হলো, আর এবার স্বাধীন দেশেই তাদের স্বপ্ন ভঙ্গ হচ্ছে বারবার। স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের খেলার মধ্যে জনগণের দিন চলে যাচ্ছে_ বাংলাদেশও অতিক্রম করল চার দশক। দেশের যেমন উন্নতি হলো না, তেমনি জনগণের ভাগ্যেরও পরিবর্তন হলো না। এটা জাতি হিসেবে সত্যিই আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। যে করেই হোক বাংলাদেশের এ নাজুক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। বিদেশ থেকে যে বা যারাই এ দেশে আসেন তারা এ দেশ দেখে মুগ্ধ হন। এ মুগ্ধতা ধরে রাখতে হবে নানামাত্রিক উন্নয়ন ও কর্মসুষমার মাধ্যমে, জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ঘটিয়ে। আমরা দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের কাছে যে কোনো বিষয়ে পরমতসহিষ্ণুতা ও প্রকৃত গণতন্ত্র চর্চা প্রত্যাশা করি। কারণ মন্দের ভালো হিসেবে এ দুটি দলই বাংলাদেশ শাসন করবে। সুতরাং জনগণের ভাগ্য ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ করতে হবে। যে কাজ করলে দেশ ও জনগণের মঙ্গল হয় সেদিকেই উভয় দলের মনোযোগ দেয়া উচিত।
প্রতিহিংসা প্রতিহিংসা ডেকে আনে, ধ্বংস ডেকে আনে ধ্বংস। সুতরাং ধ্বংসাত্মক রাজনীতি পরিহার করে দেশ ও জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করাই বুদ্ধিমানের কাজ। তাতে দেশও এগোবে জনগণও রক্ষা পাবে। মালয়েশিয়া ঘুরে দাঁড়ালো, যুদ্ধবিধ্বস্ত ভিয়েতনাম ২৫ বছর যুদ্ধ করে ঘুরে দাঁড়ালো, জাপান আণবিক বোমায় বিধ্বস্ত হয়েও ঘুরে দাঁড়ালো, আমরা পারছি না কেন? এই কেন-র উত্তর অনেক লম্বা। মালয়েশিয়ায় মাহাথির মোহাম্মদের মতো একজন হলধর ছিলেন, আমাদের দেশে কি এমন একজন আছেন? আমরা তো আমাদের হলধরকে সপরিবারে হত্যা করেছি, সেইসঙ্গে হত্যা করেছি গণতন্ত্র, অর্থনীতি ও দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিকেও। তাহলে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ কীভাবে গড়ে উঠবে? এসব নেতিবাচক ও অন্ধকার দিককে পায়ে ঠেলে, মাড়িয়ে-ডিঙিয়ে বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড়াতে হবেই। তা না হলে বাঙালির সব আন্দোলন, সংগ্রাম, আত্মত্যাগ, আত্মবিসর্জন বৃথা হয়ে যাবে। বৃথা হয়ে যাবে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও। এসব ব্যাপারে জনসাধারণের পাশাপাশি রাষ্ট্র ও সরকার সচেতন ও উদ্যোগী না হলে বাংলাদেশের ভাগ্য ফেরানো কঠিন। ভাগ্য ফেরানো কঠিন জনগণেরও। তারপরও আমরা তো কঠিনেরে ভালোবাসতে চাই। প্রতিষ্ঠা করতে চাই সংসদীয় গণতন্ত্র। এ ক্ষেত্রে সরকার ও বিরোধী দলের সদিচ্ছা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।
উৎসঃ যায় যায় দিন
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment